১৫ই আগস্টের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা দেশের উন্নয়ন চায় না তারা ...
১৫ই আগস্টের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা দেশের উন্নয়ন চায় না তারা অলস হয়ে বসে থাকবে না। ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলা বিএনপি-জামায়াতের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সংঘটিত হয়েছিল। দেশের চলমান অগ্রযাত্রায় পুনরায় এমন আঘাত আসতে পারে। এই আঘাত হয়তো সামনে আরও আসবে, কারণ আমার আব্বা যখন দেশটাকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন তখনই ১৫ই আগস্ট ঘটেছিল। গতকাল ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার ১৮তম বার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে তিনি একথা বলেন। দলের কেন্দ্র্রীয় কার্যালয়ের সামনে ২৩, বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সভায় বক্তৃতা করেন। দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ, এমপি অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। দলীয় অফিসে এসেই প্রধানমন্ত্রী পার্টি অফিসের সামনে নির্মিত শহীদ বেদিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে ২১শে আগস্টের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। বিএনপি’র সঙ্গে সমঝোতায় বিভিন্ন গোষ্ঠী সরকারকে চাপ দিচ্ছে- এমন ইঙ্গিত করে সভাপতির বক্তৃতায় সরকার প্রধান শেখ হাসিনা বলেন, এখন তাদের (বিএনপি) সঙ্গে বসতে হবে, তাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে।
তাদের খাতির করতে হবে। তাদের ইলেকশনে আনতে হবে। এত আহ্লাদ কেন আমি তো বুঝি না। বাংলাদেশে কী আর মানুষ নেই? অনেক বিদেশির কাছে গিয়ে কান্নাকাটি... সেখানে থেকে এসে রিকোয়েস্ট করে, কোনোমতে তাদের একটু জায়গা দেয়া যায় কিনা? জায়গা দেবে কি দেবে না সেটা ভাববে জনগণ। সেই সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশের জনগণ।
তারা আবার সেই সন্ত্রাসের যুগে ফেরত যাবে? নাকি আজকে বাংলাদেশের উন্নয়ন হচ্ছে, সেই উন্নয়নের যুগে থাকবে। এই সিদ্ধান্ত তো জনগণকে নিতে হবে। আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা তো জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছি। যে দলের নেতাই নেই। সাজাপ্রাপ্ত অথবা পলাতক। তারা ইলেকশন করবে কী, আর কীভাবে ভোট পাবে। ভোট কাকে দেখে দেবে এটাই তো প্রশ্ন। তারপরও অনেক চক্রান্ত আছে। এখনো যেমন নানারকমের চক্রান্ত। ইলেকশন সামনে এলেই শুরু হয়। কিন্তু এ দেশের মানুষের ওপর আমার আস্থা আছে, বিশ্বাস আছে। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়ার বক্তৃতাগুলো অনুসরণ করবেন। কোটালীপাড়া বোমা পুঁতে রাখার আগে বলেছিল, আওয়ামী লীগ শত বছরেও ক্ষমতায় আসতে পারবে না। ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার আগে, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা, বিরোধী দলের নেতাও কোনোদিন হতে পারবে না। এগুলোর তো রেকর্ড আছে। এই বক্তৃতা সে আগাম দিলো কীভাবে? যে বিরোধী দলের নেতা হতে পারবো না। তার মানে আমাকে হত্যা করবে। এই পরিকল্পনাটা তারা নিয়ে ফেলেছে। ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলায় বঙ্গবন্ধুর অন্যতম পলাতক খুনি কর্নেল রশিদ এবং ডালিম জড়িত এবং তারা বাংলাদেশে ছিল উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, খালেদা জিয়া তাদেরও দেশ থেকে পালিয়ে যেতে সে সময় সাহায্য করেছিল। তিনি বলেন, ‘আমার রক্তাক্ত শরীর দেখে তারা প্রথমে ভেবেছিল অপারেশন সাকসেসফুল কিন্তু যখন দেখলো আমি মরি নাই তখন তারা পালিয়ে গেছে।
তারা আসলো আবার চলেও গেল কীভাবে, যদি বিএনপি সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা করা না হয়?’ প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, খালেদা জিয়া এমন কথাও বলেছিলেন যে, ‘তিনি (শেখ হাসিনা) ভ্যানিটি ব্যাগে করে সমাবেশে গ্রেনেড নিয়ে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন’। জিয়াউর রহমান এদেশে গুম-খুনের শুরু করেছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বিএনপি’র আমলে লাশ টানা, বোমাবাজিতে আহত হওয়া- এটা ছিল আমাদের প্রতিদিনের কাজ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৯৬ থেকে ২০০১ অত্যন্ত সফলভাবে দেশ পরিচালনা করে আওয়ামী লীগ মানুষের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল বলেই ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশ হয়েছে, উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে, জয় বাংলা স্লোগান ফিরে এসেছে এবং জাতির পিতার নাম বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হচ্ছে। কাজেই এগুলো যারা সহ্য করতে পারবে না তারা বসে থাকবে না, আঘাত করবেই। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে তারা আবারো জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেষ্টা করবে, সেজন্য দেশবাসীকে আমি সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। ‘অর্থনৈতিক মন্দার কারণে কিছু মানুষের কষ্ট হচ্ছে, সেটা আমি উপলব্ধি করতে পারি’ মন্তব্য করে সরকার প্রধান বলেন, বৈশ্বিক মন্দার যে ধাক্কাটা আমাদের ওপর পড়েছে, তা থেকে কীভাবে দেশের মানুষকে রক্ষা করবো সেটাই আমাদের চিন্তা। ১৫ টাকা কেজিতে ৩৫ লাখ মানুষকে চাল দেয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে। রেশন কার্ড করে দিচ্ছি। এক কোটি পরিবার রেশন কার্ড পাবে। এটা দিয়ে ন্যায্যমূল্যে নিত্যপণ্য কিনতে পারবে। আমি চাই না, আমার দেশের মানুষ কষ্ট পাক। আমাদের দায়িত্ব জনগণের প্রতি। যতক্ষণ নিঃশ্বাস আছে তা পালন করে যাবো। সেটাই হচ্ছে আমাদের প্রতিজ্ঞা।
COMMENTS